গত অস্ট্রেলিয়া সফরে ড্রেসিংরুমের খবর ফাঁস করার জন্য চাকরি গেল ভারতীয় দলের সাপোর্ট স্টাফের। ছেঁটে ফেলা হয়েছে হেড কোচ গৌতম গম্ভীরের সহকারী অভিষেক নায়ারকে। ফিল্ডিং কোচ টি দিলীপ এবং স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ সোহম দেসাইয়েরও চাকরি গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও সরকারী ভাবে বোর্ড এখনও কিছু জানায়নি। অনেকেই বলছেন, চাকরি ছাঁটাইয়ের কারণ হিসাবে ভারতীয় দলের খারাপ পারফরম্যান্সকেই দেখাবে বোর্ড। ওই সিরিজ়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১-৩ ফলে হেরেছিল ভারত। ‘দৈনিক জাগরণ’ সংবাদপত্র এই চাকরি ছাঁটাইয়ের খবর জানিয়েছে।
ভারতের হারের কারণ হিসাবে এই তিন জনের ব্যর্থতার কথা উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়, দলের ম্যাসিয়োরেরও চাকরি গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আপাতত ফিল্ডিং কোচ হিসাবে আর এক সহকারী কোচ রায়ান টেন দুশখাতে দায়িত্ব সামলাবেন বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া সোহমের জায়গায় আসতে পারেন আদ্রিয়ান লে রুস, যিনি এখন আইপিএলের দল পঞ্জাব কিংসের সঙ্গে যুক্ত। অভিষেক এবং দিলীপের পরিবর্ত হিসাবে এখনও কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি।
কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করছেন, পারফরম্যান্সটা আসল কারণ নয়। যদি সেটাই হত, তা হলে সবার আগে তো গম্ভীরের চাকরি যেত। ভারতীয় দল তার পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে এই কোচ এবং সাপোর্ট স্টাফদের নিয়েই। ফলে আসল কারণটা শৃঙ্খলাজনিত। অস্ট্রেলিয়া সফরে মেলবোর্ন টেস্টের পর ভারতীয় দলের সাজঘরে গম্ভীর ধমক দিয়েছিলেন ক্রিকেটারদের। তিনি কাকে কী বলেছেন, তা সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। তখন জানা গিয়েছিল, সেই সফরে ভারতীয় দলে থকা ক্রিকেটার সরফরাজ় খান সংবাদমাধ্যমে এই কথা ফাঁস করেছিলেন। কিন্তু এখন মনে করা হচ্ছে, সাপোর্ট স্টাফেদের মাধ্যমেই সাজঘরের কথা বাইরে বেরিয়েছিল। সরফরাজ এই কাজ করবেন— এটা ভাবা একটু কঠিন। কারণ, তিনি সদ্য জাতীয় দলে খেলছেন। তা-ও নিয়মিত নন। ফলে তাঁর মতো এক জন ক্রিকেটার নিজের কেরিয়ার নিয়ে এত বড় ঝুঁকি নেবেন, এটা অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য ঠেকেনি।
আইপিএল শেষ হলেই ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ় খেলতে যাবে ভারত। নতুন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে সেটাই তাদের প্রথম সিরিজ়। অস্ট্রেলিয়ার মতো ইংল্যান্ডে গিয়েও যাতে দুরবস্থার মধ্যে পড়তে না হয়, সেই লক্ষ্যেই হাল ফেরানোর নীতি নেওয়া হয়েছে। তবে বোর্ডের তরফে এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও ঘোষণা হয়নি।
গম্ভীর কোচ হয়ে আসার পর কেকেআর থেকে নিয়ে এসেছিলেন অভিষেককে। গম্ভীরের জোরাজুরি মেনেই রাজি হয়ে যায় বোর্ড। কিন্তু আট মাসেই চাকরি গেল অভিষেকের। অনেক ক্রিকেটারই নিজেদের কেরিয়ারের পুনরুত্থানের পিছনে অভিষেকের অবদানের কথা বলেছেন। তার মধ্যে দীনেশ কার্তিক, কেএল রাহুলেরা রয়েছেন। তবে সুনীল গাওস্করের মতো কেউ কেউ অভিষেকের সমালোচনাও করেছিলেন। যা-ই হোক না কেন, আট মাসের মধ্যে চাকরি যাওয়ার ইতিহাসে বোর্ডের সাম্প্রতিক ইতিহাসে নেই।
এ দিকে, রাহুল দ্রাবিড়ের অধীনে যে কোচিং স্টাফেরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে একমাত্র দিলীপই গম্ভীরের দলের সদস্য ছিলেন। তাঁর ফিল্ডিং করানোর অনুশীলন প্রশংসিতও হয়েছে। তিনিই ভারতের সব ম্যাচে আলাদা করে সেরা ফিল্ডার বেছে নিয়ে তাঁকে পুরস্কৃত করার রীতি চালু করেন। ফলে পারফম্যান্সের কথা বলা হলেও তাঁর শৃঙ্খলাজনিত কারণে চাকরি যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।